কলমধরা হাঁস

তিস্তার বন্ধুর ডায়েরি | বাংলা বন্ধুত্বের গল্প || Tistaar Bondur Diary | Bengali Story about Friendship

তিস্তার বন্ধুর ডায়েরি | বাংলা বন্ধুত্বের গল্প || Tistaar Bondur Diary | Bengali Story about Friendship

তিস্তার বন্ধুর ডায়েরি

তিস্তা? তোর মনে আছে আমাদের ফেলে আসা শনিবারগুলো? 

জানিস আজ স্কুলের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম। শনিবার দুপুরবেলা বলেই হয়তো একটু ফাঁকা-ফাঁকা ভাবটা বেশি ছিল। তবে নস্টালজিয়া কোথায় গিয়ে বেশি জাগলো জানিস? আজকের মেঘলা আবহাওয়াটার জন্য?

তোর মনে আছে, শুধু আমরা দুটোয় মিলে গল্প করবো বলে “ক্লাস আছে।” বাহানা দিয়ে চলে আসতাম? আমাদের ওই ফাঁকা স্কুলে দেখে ম্যাডামরাও অবাক হতো বল! ভাবতো বোধহয়, কী এমন বন্ধুত্ব আর কিসের এমন গল্প যে স্কুলকামাই করা টপারদের ভিড়ে এই দুই অবতার স্কুলে চলে আসে?

অবশ্য সে তো আমরাই জানতাম আমাদের জগতে কী ছিলো আর কী কী আরও বেশি ছিল! তোর মনে আছে আমাদের গল্পগুলো? আমাদের ছোট্ট দুনিয়া? আমাদের ডায়েরীর পাতা ভরা “মহাকাব্য” ? তুই পরে একবার বলেছিলিস এগুলো তোর এখন ছেলেমানুষী লাগে, তুই নাকি এগুলো পেরিয়ে আসতে চাস। আর তারপর তুই বেরিয়েও গেলি এসব থেকে, খানিক গা জোয়ারি করেই। 

অবাক লেগেছিল জানিস! 

আমি তো কই বেরোতে পারিনি!

আমি কি তাহলে তোকে নিজের মতো কিছু একটা ভেবে ভুল করেছিলাম? নাকি তুই’ই তখন আমার মতো কিছু একটা সেজেছিলিস? তাহলে কেন ভিড় আনলি আমাদের ছোট্ট দুনিয়াটায়? আমরা কি যথেষ্ট ছিলাম না আমাদের দু’জনের জন্য? 

তবু কয়েকবার চেষ্টা করলাম জানিস তোর আমদানি করা ভিড়ের মাঝেই সেই স্কুলের কোণের তোকে খুঁজতে। ওহ বাবা! গিয়ে দেখি ভিড়ের সবার একটা করে তুই আছিস, তারাও আবার তোর সাথে জগৎ বানাবে! ডায়েরিও এনেছে লিখবে বলে!

অনেক চেষ্টা করলাম বুঝলি, একদিন আর পারলাম না। যেদিন শেষবারের মত আমার ছেঁড়া ডায়েরিটা তোর দিকে এগিয়ে দিয়েছিলাম। তুই তখন অবশ্য নতুনের স্বাদ পেতে ব্যস্ত, নতুন মানুষকে চেনার তাগিদ চরমে। 

আমি তখন তোর জগতের ভাগ না হতে পারার ব্যর্থতা নিয়ে চলে এসছিলাম। এমনিও বন্ধুত্বে আর কত দখলদারি করা যায়? অথচ মনখারাপ, অভিমান, স্মৃতি, ইত্যাদি শব্দগুলোরও অস্তিত্ব আছে।  

আমি তো আমার কাজের অছিলায় ওদের ভুলে থাকবো, ওরা কী করে নিজেদের ভুলে থাকবে?

ভুল ভেবেছিলাম। আমিও আদপে কিছুই ভুলিনি। এক্ষেত্রে আমি হয়তো তোর উল্টো, আমি বেরিয়ে আসতেও চাইনি ওই সময়গুলো থেকে। 

তাই আবার ডায়েরি লিখলাম। আগের মত, কাঁচা হাতে। তারিখ দিলাম না, এই পাতার লেখা দিনের হিসাবের ওপরে।

সীমাহীন সমুদ্রে যেমন একটা বোতলবন্দী চিরকুট ভেসে বেড়ায়, এই লেখাও তেমনি ভাসিয়ে দিলাম হাজারো কঠিন কঠিন শব্দের সমুদ্রে। 

তিস্তা, যদি একদিন ওপরের কথাগুলো তোর নাগাল অবধি যায় তবে আশা করি তোর ভিড়ের তৈরি মেঘের মিনারে ঠিকঠাকই আছিস। চাপ নেই, তোর ফেলতে চাওয়া অতীতের ডালা সাজিয়ে বসে থাকার মতো কেউ নেই আর তোর আশেপাশে। আমি অনেক দূরে চলে গেছি তোর থেকে।

শুধু একটা কৌতূহল মিটিয়ে দিস সময় করে। 

এই যে তোকে ছেড়ে আসতে আমার কষ্ট হল, আমার যাওয়ায় তোর কষ্ট লাগেনি?

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!
Scroll to Top