
তখন থাকতাম বেলঘরিয়ার এক কামরার এক ভাড়া বাড়িতে। মা-র্জারের সাথেও পরিচয় সেখানেই, বা বলা ভালো সাক্ষাৎ। পরিচয় করার মত বন্ধুত্বপূর্ণ জায়গায় আমাদের সম্পর্ক যায়েনি আমাদের। তবুও মাতৃত্ব এক এমন বোধ যার সামনে মাথা নত না করে পারা যায় না, তা সে মা হোক বা…
মার্জার
বেলঘরিয়ার ঘরটায় যাইনি বেশ কয়েকদিন হল। এমনিও আগে যতবার গেছি লক্ষ্য করেছি, একটা বিড়াল বারান্দার কোনটায় ঘাপটি মেরে বসে থাকে। যেই আমার উপস্থিতি টের পায় ওমনি পালায় আর যাওয়ার আগে কটমটিয়ে তাকায় আমার দিকে। যেন তার ডেরায় আমার অনধিকার প্রবেশ হয়েছে। ব্যাপারটা ভালো লাগতো না লাগলেও “কী আর করা যাবে?” ভেবে এড়িয়ে যেতাম।
গতকাল তালা খুলতে খুলতেও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তির অপেক্ষা করছিলাম। অভ্যাসমত লাইট জ্বালিয়ে কোণের দিকটা দেখতেই আবার দেখা পেলাম ‘তাঁর’। কিন্ত এবার সে পালালো তো না’ই উল্টে আবার দেখি তার দৃষ্টিতে আজব এক পরিবর্তন। সে দৃষ্টিতে রাগ ছিলনা, ছিল সতর্কতা আর অবিশ্বাস। হয়তো ভয়ও ছিল আশ্রয় হারিয়ে ফেলার (যেটা খুঁটিয়ে দেখার অনুমতি তখন আমার ক্লান্তি আমায় দেয়নি)।
ব্যতিক্রমী ব্যাপার ঘটায় একটু এগিয়ে দেখলাম, সেই বিড়াল তার সদ্যোজাতকে আগলে বসে। দূর থেকে দেখে বুঝলাম যেটুকু তাতে মনে হল বিড়ালছানাটা এতটাই ছোটো যে দুধ খেয়ে মায়ের গা ঘেঁষে মিউ মিউ করা ছাড়া আর কোনো কিছু করার মতো বড় হয়নি। আমি এক-দু পা এগিয়ে এসেছি দেখে মা বিড়াল দেখলাম আরও একটু আগলে নিল তার সন্তানকে।
এবার আমি যেহেতু মানুষ তাই এসব দেখে ওই “ও’মা! কি কিউট!” গোত্রের আদিখ্যেতা বেরিয়ে আসে। ফোনের ফোকাস হারানো ক্যামেরাতে যা তোলা যায় তুললাম।
আজ ফেরার সময়ও দেখি মা সন্তান আগলে বসে। ওদের “কিছু ভালো” করার ক্ষমতা সেই মুহূর্তে আমার আছে কিনা ভেবে দেখলাম। তারপর চলে এলাম, সময় ছিলনা আর ভাবার। আমাকেও ফিরতে হবে আমার মায়ের কাছে।
খবরে এখন ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস, তাছাড়াও রয়েছে বৃষ্টির ভ্রুকুটি। আচ্ছা, ওরা ঠিক থাকবে তো? খাবার জোগাড় করতে পারবে তো মা বিড়াল? -এসব চিন্তা করা আদপে বৃথা। নিষ্ঠুর এই দুনিয়ায় টিকে থাকার জন্য মাতৃত্বের দায়বদ্ধতা অনেক কিছু শিখিয়ে দেয়। আপনি বা আমি হয়তো আমাদের পাত থেকে মাছের কিছু টুকরো দিয়ে এক কি দুদিন ওদেরকে সাময়িক রসদ দেব। কিন্তু এখন যখন সে “মা” হয়েছে, লড়তে না জানলেও তাকে লড়তে শিখতে হবে। পাখি বা ইঁদুর বা মাছ যা হোক জোগাড় করে সন্তানের মুখে খাবার তুলে দিতে হবে।
এই ব্যাপারটা বিশ্বের সমস্ত মায়েদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। আগেও বলেছি, আমাদের মায়েরা “মা” হতে জন্মায়নি, সবাই “মা” হয়েছে। না পারলেও হয়েছে, পারলেও হয়েছে। কারণ এটাই মাতৃত্ব, এটাই সেই শক্তি যা পৃথিবীর সমস্ত মা’দের অতুলনীয় বানায়।
প্রাণী, উদ্ভিদ ও জীবজন্তু নির্বিশেষে সবাইকে মাতৃদিবসের শুভেচ্ছা জানাই, সঙ্গে সবার শেষ ঠিকানা মা পৃথিবীকেও।