কলমধরা হাঁস

অ্যাঞ্জেল | হাঁসের খাতা 21/12/2022 | A tribute to Argentine Legend | Angel Di Maria

Angel Di Maria tribute from A Duck with Her Pen

আমার ব্লগের বেশিরভাগ লেখার মতই এ লেখা আজকের না, বিশ্বকাপের ঠিক পরেই আর্জেন্টিনার প্লেয়ার ও পরিস্থিতির ওপর দাঁড়িয়ে কিছু লেখা ফেসবুকে পোস্ট করেছিলাম নিজের পেজে আর ব্যক্তিগত প্রোফাইল থেকে। আজকে কোপা জেতার পর “সব পেয়েছি”-এর মাঝেও বারবার টাইমলাইন জানান দিচ্ছে যে দেশের হয়ে শেষবারের মত আমাদের নীল সাদা রূপকথার “Angel” খেলে নিয়েছে।

তাই তাঁর বিদায়বেলায় এই লেখা ব্লগে দেওয়ার আগে কৃতজ্ঞ fangirl হিসাবে কিছু বলতে চাই, (ইংরাজিতেই, স্প্যানিশ অতটাও জানি না)

“Thank you” would be an understatement for what you have done to us! We can’t thank you enough Angel. Happy Retirement and Enjoy your deserved leisure.

অ্যাঞ্জেল

“এই তোর চেহারার অবস্থা, রোগে তো তোকে ধরবেই। এই নিয়ে টিকতে পারবি?” এই বলে দিদি চলে গেলেন পাশের ঘরে। আমি তখন আমার সাইনাস মাইগ্রেনের সম্মিলিত ব্যথার সাথে আমার শরীরে থাকা স্নেহ পদার্থের সম্পর্ক খুঁজছি। কান গেল পাশের ঘরে, দিদির নাকি পুরোনো জামা গায়ে হয়না বলে কষ্ট। আমি আর আমার ভাবনা বাড়িয়ে ব্যথা বাড়ালাম না, মনোনিবেশ করলাম সামনে থাকা টেন ইয়ারস সলিউশনে। ক্যালকুলেটরের পাশে থাকা পেনকিলারের পাতাটা আরেকবার চকচক করে উঠলো।

………………………

-“আবার চোট?”
-“তাই তো শুনছি…”
-“এবারও গেল রে!”
আমার আশেপাশে থাকা আর্জেন্টিনা সমর্থকদের সাথে দি মারিয়াকে নিয়ে এরকম কথোপকথন হওয়া যেকোনো আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে অবধারিত ছিল। বাকি খেলোয়াড়দের নিয়ে কমবেশি অভিযোগ থাকতো কিন্তু দি মারিয়ার জন্য ওই এক বাক্য, “ওকে তো ঠিক করে পেলামই না!”
হ্যাঁ, খেলাটা যখন ফুটবল, শারীরিক সক্ষমতার অনেক মাপকাঠি থাকবে বৈকি। নির্মম প্রতিযোগিতার জগতে পেশির জোর, সুঠাম চেহারা জরুরি হয়তো। কিন্তু দেবদূতদের কি দরকার অতিমানবিক হয়ে?
অ্যাঞ্জেল দি মারিয়া এমন একজন খেলোয়াড় যার খেলার মাঠে অস্তিত্ব বোঝার জন্য আপনার লাইন-আপ দেখার দরকার হয় না, খেলা দেখলেই বোঝা যাবে। অলিম্পিক থেকে চ্যাম্পিয়ন্স লীগ; কোপা থেকে বিশ্বকাপ; ইতিহাস ঘাঁটলে বড় মঞ্চের মোক্ষম সময়ে যার নাম জ্বলজ্বল করছে দেখতে পাবেন সে অ্যাঞ্জেল দি মারিয়া।
অথচ দেখুন, তার নামের পাশে নেই গালভরা নাম বিশিষ্ট কোনো ব্যক্তিগত পুরষ্কার। তারই করা গোলে জেতা ট্রফির পরিসংখ্যান দেখিয়ে ছাগল (GOAT) “বিতর্কে” গণমাধ্যমে মারপিট লাগে, আড়াল হয়ে যায় অ্যাঞ্জেলের মহিমা।
কিন্তু মহিমা কমে কি?

অ্যাঞ্জেলরা এরকমই, তারা কোনোদিনই ব্যক্তিগত চাকচিক্যের পরোয়া করে না। দেশ বিদেশের রূপকথার মতই অ্যাঞ্জেলরা আসে, লড়তে থাকা মুখ্যচরিত্রদের প্রয়োজনের সময় পাশে দাঁড়ায়। নিজেদের জিয়নকাঠির স্পর্শে ঘুরিয়ে দেয় ঘটনাপ্রবাহ, গল্পরা পূর্ণতা পায়।

আমার মত আজন্ম শারীরিক সমস্যায় ধুঁকতে থাকা মানুষদের কাছে অ্যাঞ্জেল দি মারিয়া একটা দৃষ্টান্ত, একটা অনুপ্রেরণা। দি মারিয়া দেখিয়ে দিয়েছে, প্রতিভা আর সদিচ্ছা থাকলে কিভাবে দুর্ভাগ্যের ডিফেন্স কেটে লক্ষ্য জিতে নেওয়া যায়।

আপনাদেরও বলি, আক্ষেপ হলেও হাল ছেড়ে দেবেন না যোগ্য ব্যক্তিগত খ্যাতি পাননি বলে। হয়তো আপনারই আশীর্বাদের আশায় আছে কোনো মহাকাব্যের নায়ক! আপনিও তার অ্যাঞ্জেল হয়ে দেখুন না….

অ্যাঞ্জেল দি মারিয়ার মতো!

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!
Scroll to Top