
প্রতিদিন গণমাধ্যমের অসংখ্য পোস্টের ভিড়ের মধ্যে একটা বড় অংশ থাকে ভার্চুয়াল বন্ধুদের শেয়ার করা পোস্ট। সেরকমই একদিন স্ক্রল করতে করতে আঙুল থেমেছিল একটা পোস্টে।

ব্যাপারটা সেটা নয় যে কে শেয়ার করেছে, কেন না আপাত দৃষ্টিতে এ পোস্ট এক নিরীহ প্রশংসা মাত্র।
কিন্তু গালভরা মাতৃভক্তির স্তর পেরিয়ে একটু তলিয়ে ভাবলেই অনেক অপ্রিয় সত্যি সামনে আসে, আমারও এসছিল ২০২১-এর এক ডিসেম্বরের সন্ধ্যেবেলায়। সেই বোধ থেকেই লেখা…
অতিমানবিক
নাহ,
আমি আমার মাকে প্রায়ই হাঁপাতে দেখি। একটা মানুষ যতরকম উপায়ে নিজের মানুষসুলভ কষ্টগুলো প্রকাশ করে তার বেশ কয়েকটাই নিয়ম করে দেখে এসছি এতদিন মায়ের ক্ষেত্রে। আমার মায়েরও ঘুম দরকার হয়, আমার মায়েরও মন হয় ঘরের ও বাইরের কাজগুলো থেকে একটা লম্বা ছুটি নিতে। আমার মা অবসরে ফেসবুক করে, গান শোনে, প্রিয় মানুষগুলোর সাথে নানারকম গল্প করে।
আসলে ব্যাপারটা কী জানেন তো? আমার মা আদপে “মা” হয়ে জন্মায়নি। আমার মা অনেক বছর আগে একজন মানুষ ছিলো, যার নিজস্ব জগৎ ছিলো, নিজস্ব চাওয়া পাওয়া ছিলো। আর যে অতিমানবিক শক্তির জয়জয়কার করছেন সবাই সেটা কোনো প্রদত্ত সুপার পাওয়ার নয়, অসম পরিস্থিতির বিরুদ্ধে দীর্ঘদিনের লড়াইয়ের ফল।
আশা করি ওপরের বলা কথাগুলো একা আমার মায়ের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। ফেসবুকে প্রায়ই এরকম দেখি যেখানে মা বাবাদের অতিমানবিক আত্মত্যাগ নিয়ে বেশ মাখো মাখো পোস্ট করা হয়। আচ্ছা, আমরা নিজেরা পারবো তো মানুষের আগে মা বাবা হতে?
আর পোস্টটা যেহেতু মায়েদের উদ্দেশ্যে তাই আরও একটা পয়েন্ট উল্লেখ করতেই হয়। পিতৃতান্ত্রিক বলে পরিচিত আমাদের সমাজে মায়েদের এই অমানুষিক খাটনির গুণকীর্তন করতে গিয়ে আমরা উল্টো দিকে হাঁটছি না তো? মায়েরাও যে মেয়ে!
তাই বিশ্বজোড়া মাতৃজাতির অমানুষিক পরিশ্রম আর অবহেলিত আত্মত্যাগকে গ্লোরিফাই না করেই বলছি, আমার মা একজন রক্তমাংসে গড়া সাধারণ মানুষ। প্লিজ আমার মাকে একটু হাঁপাতে দিন, একটু হাঁফ ছেড়ে বাঁচতে দিন।