কলমধরা হাঁস

শুভ রবীন্দ্রজয়ন্তী | কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে হাঁসের প্রণাম || Rabindra Jayanti Homage to Rabindranath Thakur

রবি ঠাকুরকে নিয়ে কথার অন্ত নেই। তাঁকে নিয়ে অহরহ কাটাছেঁড়া করে যাচ্ছে যে যার নিজের মতো।

তবুও এতো করেও রবির অসীম ছোঁয়া যায়?

আমি আর কাটাছেঁড়া করিনি, দু’বার শুধু নিজের কিছু অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিয়েছিলাম। একবার আগন্তুক পিকচার্সের ইউটিউব চ্যানেল, যখন মহামারীর প্রকোপ শুরু হয়েছে আর ভয়ও চরমে। আরেকবার কাগজফুলের ফেসবুক পেজে, তখন ক-রো-না থাকলেও জনমানসে ভয় কমে এসছে অনেকটাই। আজকে আবারও সেই দুই লেখাই দিয়ে দিলাম।

রবীন্দ্রজয়ন্তী ১৪২৭ | হাঁসের খাতা 09/05/2020

রবীন্দ্রজয়ন্তী ১৪২৯ | হাঁসের খাতা 09/05/2022

আমার বাপু ঠাকুরকে নিয়ে ওতো কাটাছেঁড়া করতে ভালো লাগে না….আমি ততক্ষণ নিজের কাজ সারতে সারতে আরেকটা রবীন্দ্রসঙ্গীত গেয়ে নি গুনগুন করে।

রবীন্দ্রজয়ন্তী ১৪২৭ | হাঁসের খাতা 09/05/2020

“মা, এটা কে?” শৈশবের স্বাভাবিক কৌতূহলের হাত ধরে এসবের সূত্রপাত, বলতে পারা যায় এটাই আমার রবি-ব্রহ্মাণ্ডের “বিগ ব্যাং”।

“কুমোর পাড়ার গরুর গাড়ি”-র ঘোর কাটেনি তখনও, নাচের স্কুলে গিয়ে জানতে পারলাম “মেঘের কোলে রোদ হেসেছে” ও নাকি তারই সৃষ্টি। আমার ৬ বছরের মস্তিষ্ক বেশ অবাক হয়েছিল।

কয়েক’টা ক্যালেন্ডার পুরোনো হওয়ার পর পৌঁছলাম কৈশোরে। এখানেও দেখতে পেলাম সেই অতিপরিচিত দাড়ি ঘেরা আবক্ষ মূর্তি। তার বার্তা যেন সদ্য শেখা বীজগণিতের অভেদ সূত্রের মতো, যা জ্ঞাত দুনিয়ার যেকোনো জটিল রাশিকে বাঁধতে পারে কোন বইয়ের পাতায়। আরও বিস্ময় ঘিরলো আমায়, আরও কৌতূহল জন্মালো মনে। কোথায় আরও পাবো তাকে? কোথায় সে আমার আমি কে আরও একটু বেশি চেনাবে? কোথায় গেলে সে আমাকে দেবে সেই “সত্য সুন্দর”-এর সন্ধান?

আবারও কয়েকটা ক্যালেন্ডার পুরোনো হলো। এবারের প্রেক্ষাপট বর্তমান সময়। কাল একটা নিউজ চ্যানেলে এক চিকিৎসকের কিছু বক্তব্য শুনলাম, যার সারবত্তা এটাই যে এখন সারাবিশ্বে এখন একটাই সমস্যা, বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে কিছু খারাপ হলে ধরে নিতে হবে সেটা আমাদের সমস্যা, এখন আমেরিকার সমস্যা ইউরোপের সমস্যা বলে আলাদা কিছু নেই। শুনে থমকালাম কিছুক্ষন, কোথায় যেন খুব চেনা ঠেকলো কথাটা।
পরক্ষনেই খেয়াল হলো, সে তো সারাক্ষণ গেয়ে যেত বিশ্বমানবের জয়গান। যে গানের ছন্দে ছিলো শান্তি, সুর ছিলো ভালোবাসা। আমরা শুনতে চাইনি এতদিন, আজ শুনছি, দুর্ভাগ্যবশত এক মহামারীর দৌলতে! তবে কি তাকে বুঝতে অনেকটা দেরি করে ফেললাম?

নাহ! রবি-ব্রহ্মাণ্ড কে জানার নির্দিষ্ট সময় ও সীমানা নেই, থাকা উচিৎ নয়।

তার “আকাশ ভরা সূর্য তারা”-র আলোকে আলোকিত হয়ে ধন্য আমি! হে মহাপ্রাণ! আমি তোমার অসীমের বাসিন্দা, আমি তোমার অমৃতনামের আশ্রিতা

রবীন্দ্রজয়ন্তী ১৪২৯ | হাঁসের খাতা 09/05/2022

রবিঠাকুরের প্রেমভাবনা প্রভাব ফেলেনি মনে, এমন কিশোরী পাওয়া দুস্কর। কেউ ‘বিরহে বিলিন’ থাকতে চায়, কেউ আবার বিলাপ করে ‘চিরদিন কেন পাই না?’ তবে এই ‘সাধের যাতনা’দের ভিড়ে আমিও আমার জায়গা পেয়েছিলাম, রবির আলো কখনও কাউকে বঞ্চিত করেছে?

দশক খানেক আগেকার কথা, সদ্য কৈশোরে পা দেওয়া আমি তখন নিয়মিত যেতাম “স্কুল” নামক এক বিচিত্র সার্কাসে। সেখানে দেখতাম কীভাবে নারী এবং মানুষ হওয়ার আগেই একদল প্রাণী নারীত্ব ও মনুষ্যত্বর মাপকাঠি ঠিক করে ফেলেছে। এবার এই মাপকাঠিতে হিসাব করার দলে অনেক সার্কাসের বাইরে বাস করা বয়ঃপ্রাপ্ত প্রাণীও ছিল। এরা সবাই দেখতে এক না হলেও এদের জীবনের উদ্দেশ্য আর কথাবার্তা আজব রকমের এক ছিল।
স্বাভাবিকভাবেই এই মাপকাঠিতে আমি নিজেকে খুঁজে পেতাম না আর তা নিয়ে আমার থেকেও বেশি মাথাব্যাথা ছিল তাদের। আমি কে, কী, কেন, কিভাবে, কোথা থেকে, কোন মাল্টিভার্সের এসব প্রশ্নের সম্মুখীন হতাম রোজই। এরমধ্যে তাদের সবথেকে কষ্টের কারণ ছিল আমার সদাবিকশিত দাঁতকপাটি।


“তুই সবসময় এমন ভাবে থাকিস কেন রে? তোর কষ্ট লাগে না বল?”
“একটু সিরিয়াস না হলে জীবনে কিসসু করতে পারবি না।”
“তুই এখনও বড় হসনি বল? বড় হলে বুঝবি!”
“তুই এত হাশিখুশি থাকিস কী করে? দুঃখ বুঝিস না তুই বল?”
.
.
সারাদিন সুস্থ মস্তিস্কের মানুষদের সাথে মিশে যখন বাড়ি ফিরতাম, ছাদে চলে যেতাম হাওয়া খেয়ে অসুস্থ হব বলে, সাথে নিতাম ডায়রি, পেন, ফোন আর হেডফোন। কখনও পাখি গুনতাম, কখনও আবার ডায়রি লিখতে লিখতে যখন ক্লান্ত হয়ে শুয়ে পরতাম মাদুর পেতে। আর তখনই মনের মধ্যে ভিড় করে আসত সারাদিনের কথাগুলো। উদাস হয়ে থাকতে থাকতে দিনের আলো নিভে যেত কখন টেরও পেতাম না মা ডাকার আগে। তবে হাজার চেষ্টা করেও কাঁদতে পারতাম না কথাগুলো ভেবে, বরং হেসে ফেলতাম আরও বেশি করে।
রবিঠাকুর কে নিয়ে একটা দারুণ ব্যাপার হল যে আমরা তাঁকে শুনি বা দেখি সারাক্ষণই কিন্তু বুঝি জীবনের বিশেষ এক সময়ে, এক বা একাধিক বার। এমনই একদিন গান শুনতে শুনতে কানে এল…

“আমার মতন সুখী কে আছে?
আয় সখী, আয় আমার কাছে—
সুখী হৃদয়ের সুখের গান
শুনিয়া তোদের জুড়াবে প্রাণ।”


আবারও হাসলাম, তবে মুচকি হাসলাম। একটা বেশ “আশ্রয় পেয়েছি” গোত্রের শান্তি পেলাম।
তারপর আবার কী? রবিঠাকুরের মন্ত্র পেয়ে সেই যে দাঁত বার করে হাসার সায় পেয়েছি, এখনও তাই করি। সঙ্গে জুটিয়েছি আমার মতই আরও কটা বস্তুকে, যারা ‘কেবলই হাসে, কেবলই গায়।’ অন্তত খুব দুঃখ না পেলে বা খুব চাপে না থাকলে এটার অন্যথা হয় না। ওহ, বলতে তো ভুলেই গেছিলাম যে আমিও একটা মানুষের মত দুঃখ পাই! না বললে কেউ জানতেও পারত না। হেহেহেহে!

শুরুতেই বললাম রবির আলো কখনও কাউকে বঞ্চিত করেনি। এতক্ষণ যা বললাম, তা রবিকিরণের একটা রশ্মি মাত্র। সবটা বলে ওঠার ভাষা ও সময় দুটোই নেই এখন।

শুভ রবীন্দ্রজয়ন্তী!

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!
Scroll to Top