কলমধরা হাঁস

বসন্তের ডায়েরি | হাঁসের খাতা 09/03/2022

দিনলিপির হিসাব বলছে ২০২২-এর ৯-ই মার্চ লেখা। তখন কী কারণে পোষ্ট করিনি তা মনে রাখার স্মৃতিশক্তি আমার নেই। আর দেরি না করে পোষ্ট করলাম। কে জানে, স্মৃতিশক্তির আশীর্বাদ আর ক’দিন?

বসন্তের ডায়েরি

বসন্তকাল, নবজীবন ও যৌবনের প্রতীক হয়ে ফিরে আসে প্রত্যেকবার। যে যৌবনের মিশে থাকার কথা উৎসাহের, উদ্দীপনার, প্রেমের…।

আমার বয়স এখন তেইশ বছর, খাতায় কলমে আমিও আমার জীবনের “বসন্তে” আছি। তাহলে কেন আজ অবধি জেনে আসা বসন্তের সংজ্ঞাগুলোর সাথে ঠিক মেলাতে পারিনা নিজেকে?

বয়োজ্যেষ্ঠরা যদি কেউ এই মুহুর্তে আমার এই লেখা পড়েন তবে ইতিমধ্যেই আমার বিচার শুরু করে দিয়েছেন। ছোটরাও করতে পারে বলা যায়না। হয়তো ভবিষ্যতের আমিই আমার বিচার করবো! যাক সেই হিসাবে না গিয়েই বলছি, এই যে আমাদের প্রজন্মটার এতো ঘ্যানঘ্যান করা ফেসবুক জুড়ে, কোথাও গিয়ে একটা প্যাটার্ন পান না? কখনও ভেবে দেখেছেন, কয়েক বছর আগেও সাইকেল নিয়ে টইটই করে ঘুরে বেড়ানো বাচ্চাটা একটু বড় হতেই এরকম গুটিয়ে গেল কেন?

বিগত কয়েক বছরে অনেক কিছুর সমীকরণ পাল্টেছে। মহামারীর থেকে মূল্যবৃদ্ধি, একের পর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগ, যুদ্ধ…. কিছুই আর হতে বাকি নেই যেন। একটা গোটা প্রজন্ম, যাদের বসন্ত কাটার কথা ছিল রঙে, আনন্দে, ছুটিতে….তাদের দিন কেটেছে এই ডামাডোলের দুনিয়ায় ভবিষ্যত গড়ার লড়াইয়ে। কেউ পড়াশুনো করে গেছে ঘরের এক কোণে, কেউ পড়াশুনো শেষে কাজ খুঁজতে বেরিয়েছে রোগের ঝুঁকি নিয়েও। যে যুগলদের কথা ছিল বসন্তের বিকালে পাশাপাশি সূর্যাস্ত দেখার, তারা হয়তো আজ রোজগারের তাগিদে পৃথিবীর দুই প্রান্তে পড়ে আছে!

হ্যাঁ, আমি ঠিক এই প্রজন্মের একজন। আমি খবর দেখি, ভয় পাই পরিস্থিতি দেখে। আমি রোজ নিজের সীমাবদ্ধতার সাথে দাড়িপাল্লায় মাপি আমার ভবিষ্যত। আমি হিসাব করি নিজের ঠিক কী কী আর কতটা খুইয়ে একটা আশানুরূপ রোজগার করতে পারবো। দুশ্চিন্তা আমার অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।

কিন্তু লোকাচার একটা বড় জিনিস, তার চেয়েও অনেক বড় প্রকৃতি। আর উৎসবের মাহাত্ম্যটা এখানেই, দুটোকেই উদযাপন করে! তাই বসন্তের সংজ্ঞায় মিলতে না পারলেও বসন্ত উৎসবের আমেজে ঠিক মিশে যাই। খুশি হই বাজারে রংবেরংয়ের আবির দেখে বা দোলের দিন সকালে ভেসে আসা “ওরে গৃহবাসী” শুনে। ভালো লাগে, যখন দেখি একসাথে না থেকেও একসময়ে ফুটছে কৃষ্ণচূড়া-রাধাচূড়া…..ভালোবাসা তাহলে সত্যিই দুরত্বকে হারাতে জানে!!

অবশেষে বসন্তে নিজের রসদটা খুঁজে পাই। তবে পলাশ শিমুল হয়ে না, গাছের নতুন পাতা হয়ে….এই পৃথিবীর বুকে একটুকরো প্রাণ হয়ে!
বেঁচে থাক জীবন, বেচেঁ থাক যৌবন, বারবার ফিরে আসুক বসন্ত……!

দোলপূর্ণিমা, ১৪২৮

কাটোয়া, পূর্ব বর্ধমান

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!
Scroll to Top